করোনা আপডেট

 

করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক? জানালেন বিজ্ঞানীরা

Corona Studies Series' to be launched by National Book Trust

সম্প্রতি হংকংয়ে এক যুবকের হাত ধরে বিশ্বে প্রথমবার একই ব্যক্তির দু’বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছে। সরকারি ভাবে নথিভূক্ত করার ঘটনা এটাই প্রথম। ওই ঘটনার পর আমেরিকাতেও একই ব্যক্তির দু’বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নথিভূক্ত করা হয়েছে।

চিকিৎসায় একবার সেরে উঠলেই শরীরে যে করোনা-রোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না, এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)! বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করে জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তি একবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হবেন না, তা একেবারেই নয়।সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় একদল বিজ্ঞানী দাবি করেন, করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি বড়জোড় দুই থেকে ছ’মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম! হংকং আর আমেরিকার ঘটনা সেই তত্ত্বকেই সত্যি বলে প্রমাণ করে দিল।

একই ব্যক্তির যে দু’বার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, সে প্রমাণ সম্প্রতি মিলেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক? চিন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের প্রমাণ আগেও মিলেছে। ওই সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জানান, প্রথম সংক্রমণের মৃত ভাইরাস চিহ্নিত হওয়ার ফলেই নতুন করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর ফলে ওই ব্যক্তি বা মহিলার রিপোর্ট পজিটিভ এলেও তাঁরা অসুস্থ বোধ করবেন না বা তাঁদের থেকে অন্যদের শরীরে ভাইরাস আর সংক্রমিত হবে না।হংকংয়ের যুবকের ক্ষেত্রেও ভাইরাসের জিনগত গবেষণা থেকেও এই তথ্য সামনে এসেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণে আক্রান্তদের শরীরে কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না বা তাঁদের মধ্যে তেমন কোনও অসুস্থতার লক্ষণও প্রকাশ পায় না।

এ বিষয়ে ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব জিয়োনমিক্স অ্যান্ড ইন্ট্রেগ্রেটিভ বায়োলজি’-র অধিকর্তা অনুরাগ আগরওয়াল জানান, এখন করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের কেস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও দ্বিতীয় সংক্রমণের হদিশ মেলেনি যেখানে দ্বিতীয়বারেও রোগী উপসর্গযুক্ত বা যাঁদের দু'বারই করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে।

এ বিষয়ে ‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানান, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী তিন মাসে শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমলেও নয়া সংক্রমণ ঘটলেই তৎক্ষণাৎ ভাইরাস কণাগুলিকে চিহ্নিত করে ফেলছে ‘বি’ সেল। ফলে নয়া সংক্রমণকে রোখার জন্য দ্রুত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যায় শরীরে। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বার করোনার সংক্রমণ রোখা না গেলেও ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই বললেই চলে।

বড় খবর! করোনা-রোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম ভারতের Covaxin

Good news is coming from Odissa on Clinical Trail of Corona Vaccine | भारत  में तैयार हो रही कोरोना वैक्सीन की अच्छी खबर ओडिशा से आ रही, जानें विस्तार  से | Hindi

জানা গেল ভারতে তৈরি করোনার প্রতিষেধক Covaxin-এর প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালের ফলাফল! প্রথম পর্যায়ে ৩৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর Covaxin প্রয়োগ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে Covaxin প্রয়োগের ফলাফল সম্প্রতি সামনে এসেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক!

Covaxin-এর প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালের প্রধান পর্যবেক্ষক ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর ডঃ ই ভেঙ্কট রাও জানান, স্বেচ্ছাসেবকদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা-রোধী অ্যান্টিবডির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। একই সঙ্গে এই প্রতিষেধকের প্রয়োগে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে কোনও বিরূপ প্রভাব চোখে পড়েনি।

ডঃ রাও জানান, ১৪ দিনের ব্যবধানে Covaxin-এর মোট ২টি ডোজ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। তার পর তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। টিকা নেওয়ার ২৮ দিন, ৪২ দিন, ১০৪ দিন এবং ১৯৪ দিনের ব্যবধানে স্বেচ্ছাসেবকদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে। টিকার কার্যকারিতার মেয়াদ সম্পর্কে ধারণা পেতেই এই বিশেষ পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ দিকে Covaxin-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছে। নাগপুরের ডঃ গিল্লুরকর হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এ শুরু হয়েছে এই টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল। এখানে মোট ৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর Covaxin প্রয়োগ করা হবে। জানা গিয়েছে, দু’টি পর্যায়ে মোট ১,১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর Covaxin পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হবে। এই ট্রায়ালের জন্য হায়দরাবাদের নিজাম ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস, দিল্লি ও পটনার AIIMS-সহ মোট ১২টি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’ (ICMR)।

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’ (ICMR) এবং ন্যাশনাল ভায়রোলজি ইনস্টিটিউট (NIV)-এর গবেষকরা যৌথ ভাবে তৈরি করেছেন ভারতের প্রথম এই করোনা টিকা Covaxin। Covaxin-এর সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্ত দিক বিস্তারিত ভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিত হওয়ার পরেই এটিকে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ICMR।

ভারতে কি করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হয়ে গেল? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রতিদিনই ভারতে ৭০-৭৫ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণকে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ফের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ হাজার ৭৬১ জন, যা এপর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। দেশে এখন মোট করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৩৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৩৩ জন।

কেন এই পরিস্থিতি? ভারতে কি তাহলে করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হয়ে গেল? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে শনিবার পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার মানুষের। বিগত ১০ দিনে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বেশ উদ্বেগজনক! দেশের ২০টি বড় রাজ্যের মধ্যে ১০টিতেই করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’-এর ইঙ্গিত মিলেছে।

মহারাষ্ট্রে মোট করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৮১ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ হাজার ১০৩ জন। মহারাষ্ট্রের পরেই দেশে করোনা বিধ্বস্ত তামিলনাড়ু। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৯০। প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ১৩৭ জন। অন্ধ্র প্রদেশেরও বেহাল অবস্থা। সেখানে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ১৬৪ জন। রাজ্যে মোট করোনার বলি ৩ হাজার ৭৯৬ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে করোনার ক্রমবর্ধমান ‘পজেটিভ রিপোর্ট’ যা র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার প্রেক্ষাপটে বিশেষ উদ্বেগজনক! বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সবই হয়তো করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’-এর প্রাথমিক পর্যায়ের ইঙ্গিত। এই পরিস্থিতি কতদিন পর্যন্ত চলতে পারে বা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতির উপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ পেতে হলে এখনই তৎপর হতে হবে।


সারা বিশ্বে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর পক্ষ থেকে ডঃ মাইক রায়ান জানান, আর মাস খানেকের মধ্যেই ভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হবে বিভিন্ন দেশে। ওই সময় অনেক দেশেই করোনা পরিস্থিতি চরমে পৌঁছাতে পারে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে জানান ডঃ রায়ান। আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করেন তিনি। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাকে ভারতেও করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হওয়ারই ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ফুসফুসের! তাই ধূমপানের অভ্যাস কাটান এই ৫ অব্যর্থ উপায়ে

Beat Heart Failure: Why heart failure is not the end of the world | India  News - Times of India

গোটা বিশ্বে ধূমপায়ীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর ধূমপানের এই নেশা ছাড়তে চেয়েও বার বার ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। ধূমপান ছাড়ার পর ছ’মাস, এক বছর বা বছর দুই তিনেক কাটানোর পরও ফের ধূমপানের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে।

সম্প্রতি কয়েকটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ধূমপায়াদের সংখ্যাই বেশি। করোনা আতঙ্কের আবহে সুরক্ষিত থাকতে তাই ধূমপানের অভ্যাস কাটানো অত্যন্ত জরুরি।

বাজার চলতি নেশা ছাড়ানোর পদ্ধতিগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয় না। কিন্তু এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যা ধূমপানের নেশা পাকাপাকি ভাবে ছাড়াতে খুবই কার্যকরী। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী ঘরোয়া উপায়ে ধূমপানের নেশা থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব।

মধু: মধুর বেশ কিছু ভিটামিন, উত্সেচক এবং প্রোটিন শরীর থেকে নিকোটিন বের করে দেওয়ার পাশাপাশি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ মধু সেবনের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে কোনও অসুবিধাই হয় না।

আদা: ধূমপানের নেশা ছাড়াতে চাইলে আদার ব্যবহার করা যেতে পারে। আদা চা বা কাঁচা আদা নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে ধূমপানের ইচ্ছে কমে যায়। ধূমপানের ইচ্ছে হলেই যদি এক টুকরো কাঁচা আদা মুখে দেওয়া যায় তাহলে ধূমপানের ইচ্ছা প্রশমিত হবে অনেকটাই।

মূলা: ১ গ্লাস মূলার রসের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে দিনে দু'বার করে নিয়মিত খেলে ধূমপানের ইচ্ছা একেবারে কমে যায়। শুধু ধূমপানের অভ্যাসই নয়, যে কোনও ধরনের নেশামুক্তির ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা মূলার উপরই ভরসা রাখেন।

লঙ্কা গুঁড়ো: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নানাভাবে যদি নিয়মিত লঙ্কা গুঁড়ো খাওয়া যায়, তাহলে ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ধূমপান করার ইচ্ছাও কমতে থাকে। এক গ্লাস জলে অল্প পরিমাণ (এক চিমটে) লঙ্কার গুঁড়ো ফেলে সেই জলটি পান করা যায়, সেক্ষেত্রে দারুন উপকার পাওয়া যেতে পারে।

আঙুরের রস: ধূমপানের ফলে শরীরের ভিতরে নিকোটিনের মাধ্যমে জমতে থাকা টক্সিন বেরিয়ে গেলেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, ধূমপানের ইচ্ছাও কমতে শুরু করে। আর আঙুরের রস ফুসফুসকে টক্সিন-মুক্ত করতে সাহায্য করে।

এই পদ্ধতিগুলি জানার পরও একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। যে কোনও নেশা ছাড়ার জন্য চাই মনোবল এবং ধৈর্য। মনের জোরে ধৈর্য ধরে এই পদ্ধতিগুলির যে কোনও একটা মেনে চলতে পারলেই সুফল মিলবেই।


নাকে করোনা টিকা বেশি কাজের, দাবি গবেষণায়

India to have its dedicated vaccine portal soon

বিজ্ঞান পত্রিকা 'সেল' এবং 'নেচার কমিউিনিকেশনে' সদ্য প্রকাশিত দু'টি গবেষণাপত্র। দু'টিতেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, করোনার প্রতিষেধক নাকে দিলেও সার্স-কোভ ২-র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মিলছে। এক ধাপ এগিয়ে একদল গবেষক দেখিয়েছেন, বহুল প্রচলিত পদ্ধতি ইন্ট্রামাসকিউলার অর্থাৎ পেশিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার চেয়েও কার্যকর হচ্ছে ইন্ট্রান্যাজাল পদ্ধতি। বেশি কাত হচ্ছে করোনা। সবচেয়ে বড় কথা, এই টিকা দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, নাসারন্ধ্রে বা শ্বাসতন্ত্রে ঢোকা মাত্রই ভাইরাস-নিকেশ সম্ভব।
ইঁদুর, রিসাস বাঁদরের উপর করা প্রি-ক্লিনিক্যাল এই ট্রায়ালের তথ্যকে আকর্ষণীয় বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কারণ, চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেলে এই ভ্যাকসিন নিজেও প্রয়োগ করতে পারবেন যে কেউ। ফলে বিপুল লোকবল লাগবে না, খরচও কমবে সরকারের। তবে বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়া ঠিক হবে না।

দু'টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের ক্ষেত্রেই বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনোভাইরাসকে। মানবশরীরে নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত যে 'ভেক্টর' কাজে লাগিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বা চিনের কানসিনো বায়োলজিক্স। এই দুই টিকাই প্রাথমিক মানব ট্রায়ালে পাশ করেছে। অবশ্য দু'টিই প্রয়োগ করা হচ্ছে পেশিতে। বস্তুত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তালিকায় থাকা ৩০টি ভ্যাকসিনের মধ্যে ২৮টিই ইন্ট্রামাসকিউলার, দু'টি ইন্ট্রাডার্মাল। সে অর্থে দেখতে গেলে অ-নামা পথেই এগোতে চেয়েছে দুই গবেষক দল।

মিসৌরির ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের দুই বিজ্ঞানী ডেভিড কুরিয়েল এবং মাইকেল ডায়মন্ডের দল কাজ করেছেন বায়োইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে তৈরি ইঁদুরের উপর, যার মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরে থাকা রিসেপটর এসিই-২, যা করোনাকে ঢুকতে সাহায্য করে। রিসাস বাঁদরের উপর পরীক্ষা করেছেন চিনের গুয়াংঝৌ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী লিন চেং এবং তাঁর দলবল। মিসৌরির বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, পেশিতে টিকা দেওয়ার পর শরীর জুড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা (সিস্টেমিক ইমিউনিটি) তৈরি হচ্ছে, কোষের চৌকিদাররাও সজাগ হয়ে উঠছে, সর্বোপরি ফুসফুস সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে। তবে শরীরে ঢোকা থেকে আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসকে। অর্থাৎ, তৈরি হচ্ছে না স্টেরিলাইজিং ইমিউনিটি। যা পাওয়া যাচ্ছে ইন্ট্রান্যাজাল পদ্ধতিতে। তৈরি হচ্ছে মিউকোসাল ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ অ্যান্টিবডি, যা কাজ করছে ফ্রন্টলাইন ইমিউনিটি হিসেবে, অর্থাৎ, প্রবেশপথেই পাহারাদার বসে যাচ্ছে। করোনা ঢুকলেই কাত! প্রথম ক্ষেত্রে ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের পরও ফুসফুসে কিছু ভাইরাল আরএনএ অবশিষ্ট হিসেবে থেকে যাচ্ছিল। ইন্ট্রান্যাজালে সাফ হয়ে যাচ্ছে পুরোটাই, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। চিনের বিজ্ঞানীদের গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে, টিকা কার্যকর। তবে নাসারন্ধ্রে প্রয়োগ করলে গোটা শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে কিছুটা কম।

সবকিছু গন্ধহীন? করোনার লক্ষণ কিন্তু! অ্যানোসমিয়ায় ভুগছেন

আমরা নাকে ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই অলফেক্টরি নামক একটি নার্ভের মাধ্যমে। এটি আমাদের নাকের উপরি অংশে ছড়ানো রয়েছে। যা সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। কোনও কারণে এই নার্ভটি অকার্যকর হয়ে গেলে আমরা ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই না। আর ঘ্রাণ না পেলে আমাদের জিহ্বার টেস্ট বাড যা স্বাদ পেতে সাহায্য করে, তা-ও অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে একই সাথে নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখে স্বাদও পাই না।
এই স্বাদহীনতা যে আসলে ঘ্রাণশক্তি হারানোর অঙ্গবিশেষ তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! আর এই দুটোই করোনার লক্ষণ। তবে স্বাদহীনতাও অ্যানোসমিয়ার মতোই আর একটি রোগ। এর পোশাকি নাম অ্যাগিউসিয়া (Ageusia)। এই ধরনের রোগাক্রান্ত হলে স্বাদকোরকের কোনও সেন্স থাকে না। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রকে সম্পূর্ণ ভাবে বিকল করে দেয় অতিমারি এই ভাইরাস। ফলে তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা পুরোপুরি চলে যায়। আর গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা চলে যায় বলেই খাবার আমাদের কাছে যেমন গন্ধহীন হিসেবে ধরা দেয়, তেমনই আবার স্বাদহীনও হয় তা।
ঠান্ডা লাগা, অ্যালার্জি, নাকের ভিতরে বা সাইনাসে পলিপাস হয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ থাকলে। কিছু ওষুধ খেলে, যেমন- এজিথ্রোমাইসিন, এমপিসিলিন, জিটিএন, ক্যাপট্রোপিল ইত্যাদি কারণে। এছাড়াও জীবাণুনাশক ওষুষের সংস্পর্শে এলে, মাথায় আঘাত পেলে। নেশা জাতীয় দ্রব্য নাক দিয়ে গ্রহণ করা, যেমন- কোকেন, হিরোইন, ইয়াবা প্রভৃতি সেবন করলেও দেখা দিতে পারে এই দুই রোগ। করোনাভাইরাস ছাড়াও আলঝেইমার, পারকিনসন ডিসিজ ইত্যাদি রোগের কারণেও অ্যাগিউসিয়া এবং অ্যানোসমিয়া আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। মুখে বা গলায় ক্যান্সার হলে রেডিও থেরাপি নিলে, বয়সজনিত কারণে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, যেমন- স্ট্রোক হলেও হতে পারে এই দুই রোগ।
এসবের কোনওটিই যদি না দেখা যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি করোনা আক্রান্ত। এমনকী সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির সমস্যা হওয়ার পর যদি কারও ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায় বা কয়েকদিন আগে জ্বর হয়ে ভালো হয়েছে, কিন্তু এখনও খাবারের গন্ধ পাচ্ছেন না বা বেস্বাদ লাগছে খাবার, তবে সেক্ষেত্রে আপনার অতি অবশ্যই করোনার টেস্ট করা উচিত। তার আগে নিজেকে এবং পরিবারের বাকিদের আইসোলেশনে রাখুন।
উপরের সব লক্ষণগুলির পরও যদি শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, বুকে চাপ অনুভূত হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর সে রকম গুরুতর কিছু না হলে, ঘরে আলাদা নিজেকে বন্দি করে রাখতে হবে, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, ঈষৎ-উষ্ণ জল পান করতে হবে, যত বার সম্ভব নাক পরিষ্কার করতে হবে, দিনে কমপক্ষে পাঁচ বার গরম জলে সেঁক করতে হবে, গরম জলের ভাপও নিতে হবে অন্ততপক্ষে পাঁচ বার। এছাড়াও বিভিন্ন সুগন্ধির স্টিমুলেশনও নেওয়া যেতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে ভয়ের কোনও কারণ নেই। এই নিয়মগুলি মেনে চললেই সাধারণত ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই ঠিক হয়ে যাবে।
ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে ‌এমন চারটি উপাদান রয়েছে। গোলাপ, ইউক্যালিপটাস, লবঙ্গ,ও লেবুর ফুলের গন্ধ। এগুলোর গন্ধ শুকলে দ্রুত খাবারের গন্ধ বুঝতে পারবেন। এই ফুলগুলো না পাওয়া গেলে এগুলোর নির্যাস অ্যাসেন্সিয়াল অয়েলের গন্ধ শুকে দেখতে পারেন। আর তাও যদি সম্ভব না হয় তবে লেবু ও গোলাপ ফুলের গন্ধযুক্ত সাবানও কাজে আসতে পারে। আর এই ঘ্রাণশক্তি এক সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যেই ফিরে আসে। এর জন্য আলাদা করে কোনও ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

গানে-গর্জনে ৮ মিটার দূরেও ড্রপলেট, দাবি গবেষণায়

Here's what social distancing entails - Orders from the centre | The  Economic Times
ব্রিটিশ গবেষকদের মতে, ১-২ মিটারের দূরত্বকে নিরাপদ বলে ঠাওরানোর তত্ত্ব বহু পুরোনো। ড্রপলেট-বাহিত রোগের বিষয়টি সামনে এনে ১-২ মিটারের দূরত্বের কথা প্রথম বলেছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল ফাজ। ১৮৯৭ সালে। ১৯৪০ সালে হাঁচি-কাশির ছবি তুলে বোঝার চেষ্টা হয়, ড্রপলেট ঠিক কতটা দূরে যাচ্ছে।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় হাঁচি-কাশির ভিডিয়ো তুলে নিখুঁত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তাতেই দেখা যাচ্ছে, ৭-৮ মিটার পর্যন্ত ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়ছে। এই পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করছে ফ্লোরিডার বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাও। কোভিড রোগী ভর্তি রয়েছেন, এমন একটি ঘরে বাতাসের নমুনায় পরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দেখেন, রোগী থেকে ২-৪.৮ মিটার দূর পর্যন্ত করোনা-বোঝাই ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়েছে।
আবার ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এ কথাও বলছেন যে, সব পরিস্থিতির জন্য সামাজিক দূরত্বের নিয়ম এক হতে পারে না। খোলা জায়গার জন্য এক নিয়ম, আবার অফিস বা স্কুলের মতো আবদ্ধ জায়গার ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম হতে হবে। বদ্ধ জায়গায় বায়ু চলাচল কেমন, কত লোক রয়েছে, কতক্ষণ ধরে রয়েছে, তার উপরেও নির্ভর করবে সংক্রমণের সম্ভাবনা। যেমন, লোকজন বেশি রয়েছে, এমন বদ্ধ ঘরে জোরে কথা বললে, গান গাইলে বা চিৎকার করলে মাস্ক পরা থাকলেও সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। খোলা জায়গায় মাস্ক পরা অবস্থায় সেই ঝুঁকি নেই।
What is social distancing? | @theU

আবার বিনা মাস্কে ঝুঁকি প্রায় বদ্ধ ঘরের মতোই। তাঁরা দেখিয়েছেন, আমেরিকায় একটি গানের অনুষ্ঠানের রিহার্সালে একজন সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে ২০ জনের মধ্যে রোগ ছড়ায়। ঘরে ছিলেন ৩২ জন, সামাজিক দূরত্ব মেনেই। চিনে একটি রেস্তোরাঁয় তিনটি পরিবারের দশ জন এক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন। দূরত্ব থাকলেও আক্রান্ত হন।মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মন্তব্য, 'এখন আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস শিখছি। এখানে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কী হতে পারে, তা দেখানো হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সহজ নয়। সব জায়গায় ঠিকঠাক মাস্ক পরে থাকা বরং জনগণের পক্ষে সহজতর হবে।' মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস আবার বলছেন, 'এই তথ্য ইংরেজদের নিরিখে ঠিক আছে। আমাদের মতো দেশে সরকার যে নীতি সবাইকে বলেছে, তা যথাযথ, বিজ্ঞানসম্মত। একটি নীতি ছিল বলেই মানুষ সহজে সচেতন হতে পেরেছে।'




 

   রাজ্যে সুস্থতার হার ৯০ শতাংশ

Corona

Comments